রক্তে এলার্জি কেন হয় - রক্তে এলার্জি কমানোর উপায়

প্রিয় পাঠক নিশ্চয়ই আপনি রক্তে এলার্জি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানতে চাচ্ছেন। চিন্তা করবেন না তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কেননা আজকের পোস্টটিতে আমরা আলোচনা করব রক্তে এলার্জি সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে। তাই আজকের পোস্টটি টেনে টেনে না পড়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
রক্তে এলার্জি কেন হয় - রক্তে এলার্জি কমানোর উপায়
রক্তে এলার্জি হলে আমাদের শরীরের বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। এবং ঠিকমতো অ্যালার্জির চিকিৎসা করা না হলে পরবর্তীতে শরীরে বড় কোন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আজকের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন এলার্জি সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। আশা করছি আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি বেশ উপকৃত হবেন।

রক্তে এলার্জি কি

আমরা তো এলার্জি সম্পর্কে প্রায় সকলেই শুনেছি এবং জানি। এলার্জি অনেক ধরনের হয়ে থাকে। আজ আমরা আলোচনা করব রক্তে এলার্জি কি? এই বিষয়টি সম্পর্কে।
রক্তে এলার্জি হচ্ছে , রক্তের ইসিনোফিল রক্ত কোষ , যেমন সেত রক্ত , লোহিত রক্ত কণিকার মত অস্থি মজ্জা বা বোন ম্যারো থেকে তৈরি হয়। এটি হচ্ছে মূলত সেত রক্ত কণিকার একটি উপাদান।  
ইসোনোফিল হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণু এবং পরজীবী গুলোকে মেরে ফেলে। এরা মূলত সাইটোটক্সিক অনু সাইটোকাইনেজ নিঃসরণের মাধ্যমে এই কাজটি করে থাকে। এছাড়াও ইসোনোফিল পরজীবী এবং ডিম্ব ধ্বংস করে এবং এলার্জি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

রক্তে এলার্জি কেন হয়

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে রক্তে এলার্জি হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারন রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা থেকে উঠে এসেছে রক্তে এলার্জি হওয়ার পেছনের মূল কারণ হচ্ছে রক্ত দূষিত হওয়া। বর্তমানে আমরা অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং ভেজাল খাবার অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে , সেটা আমাদের শরীরে খারাপ প্রভাব ফেলছে। 
এই অস্বাস্থ্যকর এবং ভেজাল খাবার গুলোর সাথে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। অতঃপর সেগুলো রক্তের মধ্যে ঢুকে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে । এর ফলে আস্তে আস্তে আমাদের শরীরের রক্ত দূষিত হতে থাকে।
রক্ত দূষিত হওয়ার পেছনে অস্বাস্থ্যকর খাবার এর পাশাপাশি কিছু বদ অভ্যাস এবং প্রাকৃতিক কারণ ও রয়েছে। যেমন অতিরিক্ত ধূমপান করা , অতিরিক্ত মাদক গ্রহণ করা , এবং যারা অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করেন তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় রক্ত দূষিত বেশি হয়।
আর প্রাকৃতিক কারণে যাদের শরীরের রক্তের দূষণ সমস্যা রয়েছে। লক্ষ্য করে দেখবেন এমন কোন পরিবেশে তারা বেশিরভাগ সময় থাকে যেখানে দূষিত অক্সিজেন অথবা পরিবেশ দূষণ বেশি হয়। অনেক সময় দূষিত পানি এবং দূষিত বাতাসের মাধ্যমে রক্ত দূষিত হতে পারে। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে উক্ত কারণগুলোতে রক্ত দূষিত হয়। এবং রক্ত দূষিত হওয়ার কারণেই রক্তের এলার্জির সৃষ্টি হয়।

রক্তে এলার্জি হলে কি হয়

রক্তে এলার্জি বেশি হলে শরীরে অনেক রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এবং এই সমস্যা গুলি একসময় শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। এবং পরবর্তী সময়ে এই সমস্যাগুলি জটিল আকার ধারণ করার ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। রক্তে এলার্জি হলে শরীরে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সেগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল।
  • শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অসহনীয় পর্যায়ের চুলকানি।
  • শ্বাসকষ্ট।
  • বুক ভারি হয়ে যাওয়া এবং বুকে চাপ বোধ করা।
  • গলা এবং জিব্বা ফুলে যাওয়া।
  • মুখ ফুলে যাওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে গোল গোল চাকা চাকা দাগ হয়ে যাওয়া।
  • শরীরে ফোসা পড়ে যাওয়ার মত মরা চামড়া বা রাশ ওঠা।
  • ঘন ঘন বমি বমি ভাব হওয়া।
এছাড়াও আরো বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয় রক্তে এলার্জি বেশি হওয়ার ফলে। তাই এরকম কোন সমস্যা দেখলে অতিসত্বর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এবং এই সমস্যাগুলোর সঠিক চিকিৎসা না হলে পরবর্তীতে জটিল কোন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে শরীরে।

রক্তে এলার্জির লক্ষণ

রক্তে এলার্জি হয়েছে কিনা , তা বেশ কিছু লক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যায়। নিচে রক্তে এলার্জি হওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। এবং উক্ত লক্ষণ গুলো যদি আপনার শরীরে দেখা দেয় তাহলে আপনার রক্তে এলার্জি রয়েছে।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে অতিরিক্ত মাত্রায় চুলকানি হওয়া।
  • নাক দিয়ে অতিরিক্ত পানি বের হওয়া।
  • শরীরে গোল গোল এবং চাপাচাকা লাল দাগ হওয়া।
  • তলপেটে ব্যথা এবং পেট কামড়ানো।
  • হজম শক্তি কমে যাওয়া এবং পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা হওয়া।
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
  • বুকে এবং গলায় চাপ অনুভব করা।
  • নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া।
  • বারবার বমি হওয়া।
  • গলা , ঠোঁট , জিব্বা ফুলে যাওয়া।

রক্তে এলার্জি কমানোর উপায়

রক্তে এলার্জি কমানোর জন্য আপনার স্বাভাবিক জীবন যাপনে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সর্বপ্রথম আপনাকে খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। যে খাবারগুলো খাওয়ার ফলে রক্ত দূষিত হয় সেই খাবারগুলো খাওয়া বাদ দিতে হবে। তাই আজ আমরা জানবো কিভাবে আপনি ঘরোয়া কিছু নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে রক্তে এলার্জি খুব সহজেই কমাতে পারবেন। নিচে রক্তে এলার্জি কমানোর বেশকিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
  • ধূমপান পরিহার করুনঃ ধূমপান আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপানের ফলে রক্তে এলার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই রক্তে এলার্জি কমাতে হলে অবশ্যই আপনাকে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে।
  • শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানঃ শরীরের অতিরিক্ত পরিমাণে ওজন এবং চর্বি থাকলে রক্তে এলার্জির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সেজন্য রক্তে এলার্জি কমানোর জন্য অবশ্যই আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • মসলা জাতীয় খাবার পরিহার করুনঃ খাদ্যে অতিরিক্ত মসলা ব্যবহার করলে শরীরের রক্তে এলার্জির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। সেজন্য রক্তে এলার্জি কমাতে অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে।
  • টক দইঃ রক্তে এলার্জির মাত্রা কমাতে টক দই বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই রক্তে এলার্জির মাত্রা কমাতে নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো টক দই খান।
  • এলার্জি যুক্ত খাবার পরিহার করুনঃ রক্তের এলার্জি কমানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে এলার্জি যুক্ত খাবার গুলো খাওয়া বাদ দিতে হবে। এলার্জি যুক্ত খাবার খবর ফলে রক্তে এলার্জি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সেজন্য যে খাবারগুলো খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে অ্যালার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পায় সেই খবরগুলো পরিহার করতে হবে।
  • শারীরিক ব্যায়াম করুনঃ রক্তে এলার্জির মাত্র কমানোর জন্য আপনি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন। নিয়মিত সকালে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ব্যায়াম করার ফলে শরীরের দূষণের মাত্রা কমবে। এবং নিয়মিত ব্যায়াম রক্তে এলার্জি কমানোতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করুনঃ রক্তে এলার্জির পরিমাণ কমানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করতে হবে। এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে। রক্তে এলার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ পরিহার করুনঃ রক্তে এলার্জির পরিমাণ কমানোর জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে দূরে থাকতে হবে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বলতে যেখানে বায়ু দূষণ হয় । ধুলাবালি বেশি , এই স্থানগুলো পরিত্যাগ করুন।
  • লবণ খাওয়া কমানঃ অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে রক্তে এলার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেজন্য অতিরিক্ত লবণ খাওয়া ত্যাগ করতে হবে। তাহলে রক্তে অ্যালার্জির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যাবে।
  • গ্রিন টি পান করুনঃ রক্তে এলার্জির মাত্রা কমাতে চাইলে গ্রিন টি ভালো একটি মাধ্যম হতে পারে। রক্তের এলার্জির মাত্রা কমাতে গ্রিন টি বেশ কার্যকরী। তাই রক্তে এলার্জির মাত্রা কমাতে নিয়মিত গ্রিন টি পান করুন।

রক্তে এলার্জির মাত্রা কত

রক্তে এলার্জি হলে অবশ্যই সেটা আপনাকে পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। রক্তে এলার্জি এমন একটি শারীরিক সমস্যা যেটি খুব সহজে নির্মূল করা সম্ভব হয় না। তাই এটি অবহেলা না করে , পরীক্ষা করে সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে রক্তে এলার্জির মাত্রা কত এটা আপনাকে জানতে হবে। 
যদি রক্তে এলার্জির পরিমাণ বেশি হয় , তাহলে সেখান থেকে পরবর্তীতে আপনার জটিল কোন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। মূলত রক্ত প্রদানের মাধ্যমে এলার্জির মাত্রা পরীক্ষা করানো হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তে এলার্জির মাত্রা ১২০। এবং অপ্রাপ্তদের বয়স্কদের ক্ষেত্রে ১০০ থেকে ১১০ এর মধ্যে।

রক্তে এলার্জি পরীক্ষা

রক্তে এলার্জি পরীক্ষা হচ্ছে আপনার রক্তে ইমিউনোগ্লোবলিন নামক অ্যান্টিবডি গুলির জন্য পরীক্ষা করা। এন্টিবডি হল প্রোটিন যা আপনার শরীরের ইউনিয়ন সিস্টেম ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস এর মত ক্ষতিকারক পদার্থের প্রতিক্রিয়া। রক্তে এলার্জি পরীক্ষা সাধারণত দুই ভাবে করা হয়।
  1. মোট এলজিই পরীক্ষাঃ রক্তে এলজিই এর মোট পরিমাণ পরিমাপ করা।
  2. নির্দিষ্ট এলজিই পরীক্ষাঃ নির্দিষ্ট এলার্জেনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্তে এলজিই পরিমাপ করা।

রক্তে এলার্জি কমানোর ঔষধ

রক্তে এলার্জি কমানোর ঔষধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হবে। কখনোই আমরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এলার্জির ওষুধ খাব না কারণ এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। 
ভুল ওষুধ খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই যেকোনো রকমের ঔষধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ গ্রহণ করবেন। নিচে রক্তের এলার্জি কমানোর কিছু ঔষধের নাম বর্ণনা করা হলো।
  • Alatrol
  • Acitrin
  • Atrizin
  • Nosemin
  • Cetizin
  • Rizin
  • Dyzin

শেষ কথা

পরিশেষে বলতে গেলে উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আজ আমরা জানতে পারলাম রক্তে এলার্জি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে আপনি রক্তে এলার্জি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। 
আমাদের ওয়েবসাইটটিতে স্বাস্থ্য , তথ্য প্রযুক্তি , জানা অজানা সহ সকল ধরনের তথ্য নিউজ এবং ইনফরমেশন নিয়মিত পাবলিশ করা হয়। এইরকম তথ্যবহুল পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
1 Comments
  • INFORMATION HUB BD
    INFORMATION HUB BD November 26, 2023 at 8:39 PM

    thanks

Add Comment
comment url